পূর্বে আমরা বিকালে খেলাধুলা, আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যা নামার পূর্ব মূহুর্তে বাসায় ফিরতাম। যদি একটু দেরি হতো তাহলে বোনাস হিসেবে বকা, ঝাড়ুর বারি ইত্যাদি এইসব ফ্রি থাকতো। আর এখনকার ছেলেমেয়েরা সন্ধ্যার পরে আড্ডা দেয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়। নেই কোনো শাসন-বারণ। হারিয়ে ফেলছি এক অদ্ভুত বৈচিত্র্যের লুকায়িত আদরমাখাময় শাসন… পূর্বে আমাদের বাপ-দাদারা চিঠি দিয়ে ভালোবাসার মানুষের কাছে তার মনের ভাব প্রকাশ করতো। এবং সেই চিঠির উত্তর পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হতো। সেই অপেক্ষার মাঝে একটা নির্ভেজাল আবেগ ও অনুভূতি কাজ করতো। আর এখন আমরা অনায়সেই একটা টেক্সটের মাধ্যমেই অপরজনের নিকট মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছি। কিন্তু উত্তর পেতে এক সেকেন্ড দেরিও সহ্য করতে পারি না। হারিয়ে ফেলছি আমাদের নিষপাপ নির্ভেজাল মনের আবেগ ও অনুভূতিকে… পূর্বে একটা পরিবার বলতে অনেক কয়জন মানুষের সমাহারকে বুঝতাম। যেখানে থাকতো বুড়া-বুড়িদের নিয়ে হাসি ঠাট্টার এক জমকালো আসর। তখনকার বুড়া-বুড়িরা প্রাণখুলে হাসতে জানতো। জানতো না বৃদ্ধাশ্রম নামে আরেকটা তাদের বাড়ি আছে। কিন্তু এখনকার বুড়া-বুড়িরা জেনে গেছে তাদের শেষ ঠিকানা হবে ছোট্ট চার দেয়াল নামক বৃদ্ধাশ্রম। এখন বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলছে। কেননা এখন পরিবার বলতে ‘আমি’কে বুঝি আমরা। হারিয়ে ফেলছি পরিবারের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা…. সময়ের সাথে যুগ পাল্টাবে এটাই স্বাভাবিক। এবং সময়ের সাথে নিজেকেও পরিবর্তন করা বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা বিসর্জন দিচ্ছি আমাদের আবেগ , অনুভূতি ও মূল্যবোধকে… সময়ের সাথে আমিও তাল মিলিয়ে চলতে চাই কিন্তু রোবট হয়ে কেনো…? সময় কি আমাদের রোবট বানাচ্ছে নাকি আমরাই রোবট হয়ে সময়কে দোষারোপ করছি….?