কিশোর গ্যাং জাতির এক অভিশাপ।
সম্পাদকীয় লেখা —
এ সময়ে দাপট, ইগো প্রদর্শন করলেই হিরো হওয়া যায়। তাই কিশোরেরা হিরো হওয়ার জন্য গ্যাং সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকছে। তারা হিরো হতে গেলে আনুষঙ্গিক আরও যা লাগে, অর্থাৎ অস্ত্র, নেশা আর টাকার লোভও তাদের পিছু ছাড়ছে না। ফলে অপরাধী হওয়ার দিকে কিশোরদের কেউ কেউ এক পা সামনে বাড়িয়েই রেখেছে। আর কিশোরদের গ্যাংয়ে রূপান্তরিত হওয়ার সঙ্গে মাফিয়াতন্ত্রের ও রাজনৈতিক বিশাল একটা সম্পর্ক আছে।
কিশোর গ্যাং কালচারের পেছনে রয়েছে নানা কারণ। যেমন গ্যাং সদস্যদের অধিকাংশই দরিদ্র ও স্কুল থেকে ঝরে পড়া ছাত্র এবং এরা অনেকেই নিজের বাবার পরিচয় দেয়না কোন রাজনৈতিক নেতার ও বড় ভাইয়ের পরিচয় চলে। এসব কিশোর প্রযুক্তিকেন্দ্রিক জীবন ও বিনোদন, ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, পারিবারিক বন্ধন আলগা হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং মাদকের নেশায় নিজেদের জড়িয়ে ফেলে। পরে এরা সমবয়সী অন্য কিশোরদের সঙ্গে মিলে অন্য একটি গ্রুপ তৈরি করে। এরপর কয়েকজন মিলে তৈরি করে একটা গ্যাং। এটা প্রজন্মগত সমস্যা। এদের কে রাজনৈতিক ভাবে বিভিন্ন সময় মিছিল মিটিং ভারি করা ও নির্বাচনীয় ও বিভিন্ন সময় মারামারির কাজে ব্যবহার করা হয়। এ থেকে এরা আরও সহসী ও উদ্যোগী হয়। কিন্তু এদের ভবিষ্যৎ এভাবেই অন্ধকারে ঝড়ে পড়ে।
উদ্বেগের বিষয় হলো, নেশার টাকা জোগাড় করতে ছোটখাটো অপরাধে জড়ানো কিশোর অপরাধীরা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়ে উঠছে ভয়ংকর অপরাধী, এলাকার ত্রাস ও ছেছড়া চোর বেয়াদব হিসেবে ও চিহ্নিত। বিভিন্ন শহরে ভাড়াটে হিসেবে তারা এখন মানুষ হত্যার মতো অপরাধেও যুক্ত হচ্ছে।
কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলন এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। পরবর্তী প্রজন্মকে অপরাধমুক্ত রাখতে হলে কিশোর অপরাধের লাগাম এখনই টেনে ধরতে হবে। তা না হলে দিন দিন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে এদের কারনে সমাজের ভালো মেধাবী ছেলাগুলাও নষ্ট হচ্ছে।।
সমাজকাঠামো পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাফিয়াকেন্দ্রিক রাজনীতির ফলাফল হলো ‘কিশোর গ্যাং’। রাজনীতি যখন ক্ষমতা প্রদর্শন এবং অর্থ উপার্জনের প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে, তখন ক্ষমতার দাপট দেখানোর জন্য একটা বাহিনী গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়ে। এই বাহিনী দিয়েই এলাকায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, চাঁদাবাজি, মাদকের কারবার নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এসবের জন্য কিশোরদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, বিশেষ করে সরকারদলীয় স্থানীয় নেতারা। কিছু ক্ষেত্রে ঢাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা কিশোরদের বিভিন্ন ধরনের অপরাধে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে সেটা শুধু রাজধানীতে সীমাবদ্ধ নয় সারা বাংলাদেশের জেল, থানা পর্যায়ে জড়িয়ে গিয়েছে এই কিশোরগঞ্জের আধিপত্য।
আজকের পত্রিকায় রোববার কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেই সংবাদসূত্রেই জানা গেছে, ঢাকার মোহাম্মদপুর, আদাবর ও হাজারীবাগ এলাকায় সক্রিয় কয়েকটি কিশোর গ্যাংয়ের ৩৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
খবরটা শুনে আমাদের খুশি হওয়ারই কথা ছিল। কিন্তু তাদের গ্রেপ্তার করে তো আর অপরাধমুক্ত করা যাবে না। তা যদি হতো, তাহলে এর আগে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেপ্তার করার পর অপরাধ বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু তা হয়নি। কিশোরেরা কেন অপরাধে জড়ায় এবং কারা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয়—এ দুটি সমস্যার আসল কারণ আগে চিহ্নিত করতে হবে। এরপর সমাধানের পথ বের করতে হবে।
সবার আগে অভিভাবকদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিই তাঁদের সন্তানদের বিপথগামিতা থেকে রক্ষা করতে পারে। এরপর বড় দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর,আইনশৃঙ্খলা বাহীনি যদি প্রতিটি থানায় তৎপর হয় তাহলেই এদের কে নির্মূল করা অনেকটাই সম্ভব।
কিশোর গ্যাংয়ের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকদেরও হাত গুটিয়ে নিতে হবে। তাহলেই কেবল এই অভিশাপ থেকে বের হওয়ার একটা পথ সৃষ্টি হতে পারে।